যুগ্মসচিবের কক্ষে উপমন্ত্রীর ভাঙচুর!
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও যুগ্ম সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর বেজায় ক্ষেপেছেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। তার মতে, সবাই মিলে যোগসাজশ করে তার টেবিলে কোনও ফাইল পাঠায় না। এই নিয়ে তিনি যুগ্মসচিব (যুব) মাসুক মিয়ার কক্ষ ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই যুগ্মসচিব।
সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানের ব্যানারে নাম না থাকায় নিজ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের কক্ষে ভাংচুর করেছেন উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে সচিবের টেবিলের কম্পিউটার ফেলে দেন। ছুড়ে ফেলেন টেবিলে থাকা ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।
জানা গেছে রবিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে উপমন্ত্রী দেখেন ব্যানারে তার নাম নেই। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান রাসেল এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব নুর মোহাম্মদের অনুরোধে আরিফ খান জয় আবার ফিরে আসেন।
অনুষ্ঠান থেকে ফিরেই তিনি যুগ্মসচিবের কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর করেন—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরিফ খান জয় বলেন, মন্ত্রণালয়ে লিফটে ওঠার সময় রাগে উচ্চস্বরে কথা বলে এসেছি। এখন শুনছি, আমার নামে নাকি রটানো হয়েছে আমি একজন যুগ্ম-সচিবের রুম ভাঙচুর করেছি। এটা কোনও বিশ্বাসযোগ্য কথা হলো? তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, একজন সরকারের উপমন্ত্রী হয়ে আমি কিভাবে একজন যুগ্ম সচিবের রুম ভাঙচুর করব? এটা বিশ্বাসযোগ্য কোনও কথা হতে পারে? আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ এটি।
তবে, গত বৃহস্পতিবার যুগ্মসচিব মাসুক মিয়াকে রুমে ডেকে রুলস অব বিজনেজ সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন উপমন্ত্রী জয়। তিনি যোগ করেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রবিবার সন্ধ্যায় নিজের অফিসে সাংবাদিকদের জয় বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নথি আমার টেবিলে আসে না। বিশেষ করে অর্থ এবং বিদেশ সফর সংক্রান্ত নথি আমাকে না দেখিয়েই পাস করিয়ে নেওয়া হয়। এর মানে কী? নিশ্চয়ই এর পেছনে দুর্নীতির বিষয় আছে। না হলে আমাকে দেখানো হয় না কেন?
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার যখন সবদিকে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন যুব-ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ জামায়াত-শিবির সমর্থক রয়েছেন, যারা প্রতিষ্ঠানটিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় জয় যোগ করেন—বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট কয়েকজন যুগ্ম-সচিবও মন্ত্রণালয়ের সমস্যার বড় কারণ। তারা হলেন মাসুক মিয়া (যুগ্মসচিব, যুব) জাকির আহমেদ (যুগ্মসচিব, ক্রীড়া) ও খুরশিদ আনোয়ার (যুগ্ম-সচিব প্রশাসন)।
জয় বলেন, বিকেএসপিতে জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছি। এখন আমি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হয়েও তাদের বোর্ড সভায় আমন্ত্রণ পাই না। সচিব (নূর মোহাম্মদ) সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার? সচিব আমাকে জানালেন, এই মন্ত্রণালয়ে আগে কখনও উপমন্ত্রী ছিলেন না। তাই এই সব অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রীকে দাওয়াত করা হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এর আগে দুবার এই মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে একজন উপমন্ত্রীই পুরো মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। কত বড় মিথ্যা কথা বললেন সচিব।
জয় বলেন, আমি মনে করি, মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। একমাত্র আমি সৎ। এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। যে কেউ আমার সঙ্গে চ্যালেঞ্জে আসতে পারেন। আমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী। আমি জানিও না যে মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন তহবিল বণ্টন হয়ে যায়। প্রতিমন্ত্রী দুই বছরের ডজন ডজন বিদেশ সফর করেন। আমি দুবারও সুযোগ পাই না। উপমন্ত্রী হিসেবে একান্ত সচিব পাওয়ার কথা। অনেক দিন আমার একান্ত সচিবের পদ খালি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে